জোকুলসারলন হিমবাহের উপহ্রদ

জোকুলসারলন উপহ্রদ সত্যিই বিশেষ একটি স্থান। এই চমকপ্রদ বরফের বিস্ময়কর স্থানটি আইসল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, যা রেইকজাভিক থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এটি দেশটির সবচেয়ে গভীর হ্রদ, যা আপাতদৃষ্টিতে একটি হিমবাহের ফ্রেমে খোদাই করা হয়েছে বলে মনে হয়। বিভিন্ন রঙের বরফের টুকরো হিমবাহ থেকে ভেঙে কালো বালির সৈকতের দিকে ভাসতে ভাসতে উপহ্রদে নেমে আসে। একবার সেগুলো তীরে এসে পৌঁছালে তা আকারে সঙ্কুচিত হয় এবং অবশেষে আটলান্টিক মহাসাগরের অংশে পরিণত হয়। এই কালো সৈকত, যেখানে বরফের টুকরো গলে যায়, ডায়মন্ড বিচ বলে ডাকা হয়। আইসবার্গের ভিতরে আটকে থাকা অক্সিজেনের কারণে জোকুলসারলন উপহ্রদের রঙ পরিবর্তিত হয়। এই উপহ্রদে সীল বাস করে, অন্যদিকে পাখিদের মধ্যে, আপনি আর্কটিক টার্নের দেখা পেতে পারেন। প্রাচীন বরফে ঘেরা, জোকুলসারলন একটি প্রাণবন্ত হ্রদ এবং প্রকৃত প্রশান্তির স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্লু লেগুন রিসোর্ট

আইসল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হল ব্লু লেগুন রিসোর্ট। এটির সুবিধাজনক অবস্থান এবং অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্য এটিকে এতটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আইসল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে, ব্লু লেগুন একটি প্রধান ভূ-তাপীয় স্পা যা অনেকেই ভ্রমোণ করার স্বপ্ন দেখেন। এটি কেফ্লাভিক বিমানবন্দর এবং রেইকজাভিকের মধ্যে রেইকজানেস উপদ্বীপে অবস্থিত। বর্তমানে, ব্লু লেগুন একটি বিশ্বমানের স্পা রিসোর্ট যেখানে স্টিম বাথ, সনা এবং ওয়াটার ম্যাসেজের সুবিধা রয়েছে। এটি লাভা ক্ষেত্র এবং ভূ-তাপীয় জলপ্রপাত দ্বারা বেষ্টিত। রিসোর্টটিতে লাভা এবং মস এর মতো চমৎকার রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী আইসল্যান্ডীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। ব্লু লেগুন হচ্ছে আরাম করার এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত জায়গা।

গালফোস জলপ্রপাত

গালফোস, বা "সোনালি জলপ্রপাত", দক্ষিণ আইসল্যান্ডের অত্যাশ্চর্য দ্বি-স্তর বিশিষ্ট জলপ্রপাত এবং দেশটির বিখ্যাত গোল্ডেন সার্কেল রুটের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সব ঋতুতেই এই রাজকীয় জলপ্রপাতটিতে অনেক দর্শনার্থীকে ঘুরতে যায়। গালফোস দুটি ক্যাসকেড নিয়ে গঠিত, যার উচ্চতা ১১ এবং ২১ মিটার, যেখানে জলপ্রপাতটির মোট উচ্চতা প্রায় ৭০ মিটার। এটি হিমবাহ নদীর হভিটাতে অবস্থিত, যা আইসল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইস ক্যাপ ল্যাংজোকুল হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়। শীতকালে, যখন নদীটিতে বরফের ঝলমলে ঢেউয়ে দেখা যায়, তখন গালফোসকে বিশেষভাবে চিত্তাকর্ষক দেখায়। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে, জলপ্রপাতটির কুয়াশায় অসংখ্য রংধনু তৈরি হয়। এই জলপ্রপাতটি দেখার জন্য তিনটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখান থেকে আশেপাশের ভূপ্রাকৃতিক দৃশ্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

টিংভেলির জাতীয় উদ্যান

টিংভেলির জাতীয় উদ্যান ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং গোল্ডেন সার্কেল রুটের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এটি মধ্য-আটলান্টিক পর্বতের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে, যেখানে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ফাটলের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে দর্শনার্থীরা স্নোরকেলিং এবং ডাইভিং করতে পারেন। টিংভেলির অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত, তবে এটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যও রয়েছে। দশম শতাব্দীতে, ভাইকিং বসতি স্থাপনকারীরা বিশ্বের প্রাচীনতম সংসদ, আলিঙ্গির বৈঠকের জন্য এই স্থানটি বেছে নিয়েছিলেন। আগ্নেয়গিরির ফাটলাকৃতির এই পার্কটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত। এখানকার অন্যান্য আকর্ষণগুলোর মধ্যে উইশ লেক এবং "পেনি ক্যানিয়ন" রয়েছে, যেখানে অনেক দর্শনার্থী তাদের ইচ্ছা পূরণের আশায় পানিতে মুদ্রা ছুঁড়ে থাকেন।

হলগ্রিমস্কিরকা গির্জা

আইসল্যান্ডের শীর্ষ পাঁচটি আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে হলগ্রিমস্কিরকা। এটি একটি লুথেরান গির্জা এবং ৭৪ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন আইসল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু ভবন। উচ্চতার কারণে, এটি রেইকিয়াভিকের যেকোনো স্থান থেকে দেখা যায়। এর ভেতরে, বিখ্যাত কারিগর জোহানেস ক্লেইসের তৈরি একটি বিশ্বখ্যাত অরগ্যান রয়েছে। এই বাদ্যযন্ত্রটি ১৫ মিটার লম্বা এবং আশ্চর্যজনকভাবে ২৫ টন ওজনের। গির্জাটির অভ্যন্তরে একটি ঐতিহ্যবাহী নেভ এবং বড় গথিক ডিজাইনের জানালা রয়েছে। আইসল্যান্ডের অন্যতম বিখ্যাত ডিজাইনার ও স্থপতি গুডজন স্যামুয়েলসন, স্বার্টিফস জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে গির্জার নকশাটি তৈরি করেছিলেন বলে জানা গেছে। হলগ্রিমস্কিরকা রেইকিয়াভিকের প্রতীক, যা শহরটির আকাশরেখার উপরে এর বিশাল ধূসর টাওয়ারটি অবস্থিত। এর চারপাশে, উজ্জ্বল রঙে আঁকা লোহার তৈরি ঘরগুলো একটি অত্যাশ্চর্য বৈপরীত্য সৃষ্টি করে। হলগ্রিমস্কিরকজার চূড়া থেকে, দর্শনার্থীরা রঙিন শহর, বন্দর এবং দূরবর্তী এসজা পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।